FB LIke Bottom

Sunday, October 11, 2015

সাভারে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে এস্টেটেশনের নামে বাণিজ্য

সাভারে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে এস্টেটেশনের নামে বাণিজ্য

সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে এস্টেটেশনের নামে চলছে নীরব অর্থ বাণিজ্য। আর অর্থ না দিলে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরমভোগান্তি। ভূমি মালিকদের হয়রানীর শিকার হতে হয় সেটেলমেন্ট অফিসের প্রায় অর্ধ ডজন দালালের হাতে। চাহিদামত টাকা দিয়েও এ দালাল চক্রর মাধ্যমে আবার প্রতারিত হচ্ছেন ভূমি মালিকরা। প্রথমে মানুষ তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে তসদিক অফিসারদের সামনে গেলে বিভিন্ন ক্রটি ধরেন তারা। পরে তাদের যে নির্ধারিত লোক (দালাল) থাকেন তাদেরকে দিয়ে দেখানোর জন্য বলেন তসদিক অফিসার। তারা আবার পুনরায় কাগজপত্রের দোষক্রটি ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন একটু পরে আসেন বলে বলে অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। তাদের কাছে কাজ দিলে তারা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তসদিক অফিসারদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে দেন।

জানা যায়, সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের মাধ্যমে বিএস জরিপের মাঠ পর্যায়ে ছলিয়া, জালেশ্বর, বেলমা, সামাইর ৪টি মৌজায় জমির মালিকের জমির পরিমাণ অথবা কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা তা যাচাই বাচাই করে পর্চা দেওয়ার জন্য ৪ জন রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ করে। তারা চারটি টেবিলের মাধ্যমে কোট বসিয়ে জমির মালিকের হাতে পর্চা সত্যয়িত করে বুজিয়ে দেওয়া কাজ শুরু করেন। তা যাচাই বাঁছাইয়ের জন্য সেটেলমেন্ট অফিস গত ৫ অক্টোবর ৪ জন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে রাজস্ব অফিসার দায়িত্ব দিয়ে এস্টেটেশনের কাজ চালু করেন। আর এ কাজ চালু করার শুরু থেকেই জমির মালিকের কোন রকম ক্রটি দেখিয়ে ৫০০/১০০০ টাকা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। তারা আরো অভিযোগ করেন, অফিসারদের সামনে জমির কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তারা কাগজপত্র কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে বলেন কাজপত্র ঠিক নাই, পরে আসেন বলে তাড়িয়ে দেন। আবার কিছু জমির মালিকের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তাদের কাজ করে দিয়ে বলেন একটু বসেন কথা আছে। পরে তাদের কাছে গিয়ে বলেন, কাজ করে দিলাম কিছু নাস্তার পয়সাও কি দিবেন না। এসময় তারা তাদের প্রথমে ৫০০ টাকা দিলে তাতে রাজস্ব কর্মকর্তরা খুশি না হয়ে বলেন, কি দিলেন এটা কি কোন নাস্তার পয়সা হলো বলে আরো ৫০০ টাকা চেয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন জমির মালিকরা।

এ ব্যাপারে জালেশ্বর মৌজায় আয়েশা সিদ্দিকীর মালিকানা জমির পর্চা নিতে তার ছেলে আসাদুজ্জামান মিঠু গত ৫ অক্টোবর সাভার সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে তার জমির সকল কাগজ দেন। রাজস্ব অফিসার জমির সকল কাগজপত্র দেখে ঠিক আছে বলে পর্চাটি সত্যায়িত করে দেন। এসময় ওই অফিসার তার কাজ থেকে বকশিস দাবি করলে তিনি প্রথমে ৫০০ টাকা দেন। এতে তিনি খুশি না হয়ে আরো ৫০০ টাকা চেয়ে নেন ওই জমির মালিকের ছেলের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও কয়েকজন জমির মালিক জানান, জরিপ কর্মকর্তারা অফিসের ভিতরে নোটিশ টানিয়ে রেখেছেন ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুজনই সমান অপরাধী। কিন্তু এ চিরন্তন সত্য কথাটি এখন সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের দেয়ালে তামাশা হিসেবে শোভা পাচ্ছে।আমাদের জমির সব কাগজপত্র নিয়ে আসলাম। সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু ওই অফিসার বলে আপনার জমির কাগজ ঠিক নেই, পরে তিনি আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে আমার সত্যয়িত পর্চা দিয়ে দেন। শুধু আসাদুজ্জামান মিঠু নয়, এ রকম অনেক জমির মালিক অভিযোগ করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে।

এব্যাপারে সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো: আমির হোসেন বলেন, আমার জানামতে এধরনের কোন অভিযোগ নেই। তবে কেউ এ ধরনের অভিযোগ করলে তিনি তাকে সামনে রেখে তাতক্ষণিক বিচার করবেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, তবে আমি দালালদের বিষয়ে অবগত নই। তবে দালাল হইতে সাধারণ মানুষেকে সাবধান থাকার জন্য তিনি নোটিশের মাধ্যমে প্রচার করে দিবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের মাধ্যমে তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের বিলামালিয়া মৌজায় ৭৪ টি সীট তৈরি করে ১০ জন সার্ভেয়ার দ্বারা বিএস জরিপের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়েছিল। এসময় অসাধু সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল, এবিএম সামছুল আলম, শাজাহান মুন্সিসহ প্রায় সাভেয়ারদের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র নাই এবং জমি কম বেশি আছে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিলো জমির মালিকদের। এ সংবাদ দৈনিক ফুলকিসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় লেখালেখি হলে কতৃপক্ষে দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ওই মৌজায় বিএস মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment