FB LIke Bottom

Wednesday, October 14, 2015

"গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও আমলার জন্য আমরা পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রাম করি নি। এ দেশের চাষি, মজুর, ছাত্র সকল মানুষের বাঁচার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম।

"গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও আমলার জন্য আমরা পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রাম করি নি। এ দেশের চাষি, মজুর, ছাত্র সকল মানুষের বাঁচার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। কিন্তু জালেমের পর জালেম এসেছে দেশের শাসন ক্ষমতায়। জনগণ মুক্তি পায় নি।"
-শেখ মুজিবুর রহমান
২৪শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালের দৈনিক পাকিস্তানের রিপোর্টঃ
.
"গতকাল রবিবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষ লোকের এক বিশাল জনসমূদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, আমি ছাত্রদের ১১-দফা শুধু সমর্থনই করিনা, এর জন্য আন্দোলন করে পুনরায় কারাবরণ করতে রাজি আছি।
.
জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন যে কোন মতেই তাঁর দল সংখ্যাসাম্য মেনে নিবে না। সংখ্যাসাম্য যারা মানবে পূর্ব পাকিস্তানের তাদের ঠাই নাই। সংখ্যাসাম্যের নামে পূর্বপাকিস্তানকে ঠকানো হয়েছে। তিনি সর্বস্তরে ও সর্বপর্যায়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন।
.
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত গণসম্বর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিচ্ছিলেন। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার শেষে মুক্তিলাভের পর গতকালই তিনি প্রথম জনসভায় ভাষণ দেন।
.
এই গণসম্বর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জনাব তোফায়েল আহমদ।
.
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি রাউয়ালপিন্ডি যাব এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের পক্ষ হতে তাদের দাবি তোলে ধরবো। দেশ আমরা কারও কাছে বিকিয়ে দেইনি। আমার ৬-দফার সাথে আমার দল ও জনগণ আছে।
.
ছাত্রদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি যদি এদেশের মুক্তি আনতে ও জনগনের দাবি আদায় করতে না পারি তবে আন্দোলন করে আবার কারাগারে যাব।
.
আওয়ামীলীগ প্রধান শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবহেলার কথা উল্লেখ করে সকল ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব আদায়ের কথা বলেন। তিনি বলেন আমি সংখ্যাসাম্য মানিনা।
.
শেখ মুজিব বলেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। বর্তমান শাসনতন্ত্র বাতিল করা হবে না সংশোধন করা হবে তা নতুন পার্লামেন্টই নির্ধারণ করবে।
.
পশ্চিম পাকিস্তানের এই ইউনিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক ইউনিট ভেঙে ফেলার জন্য সেখানে একটি দাবি উঠেছে। তারা এক ইউনিট চায় না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের ভোট নেয়া হোক। তারা যদি এক ইউনিট না চায়, তবে তা ভেঙে দিতে হবে। এক ইউনিট ভেঙে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকেও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি জানান তিনি। শেখ মুজিব বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিয়ে একটি ফেডারেশন গঠন করতে হবে। জনমতের বিরুদ্ধে কোন কিছু চালিয়ে দেয়া চলবে না।
.
চাকুরী, অর্থনীতি, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত। ফলে সেখানকার লোক সবরকম সুবিধা পাচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ জন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন চাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানীদের সংখ্যা শতকরা দশজনেরও কম। কেন্দ্রীয় সরকারের সকল অফিস আদালত শুধু রাজধানীতে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যও সেখানে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে এই প্রদেশে মূলধন গড়ে উঠছে না।
.
দেশরক্ষা খাতের ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এই খাতের শতকরা আশিভাগ অর্থই পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়। কারণ সামরিক সদর দফতর সেখানে অবস্থিত। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তনের মজলুম ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে কোন ব্যবধান নাই।
.
১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে সংঘর্ষের সময় পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অবস্থার অবসানের জন্যই লাহোরে জাতীয় সম্মেলনে আমি দলের পক্ষ হতে ৬-দফা দাবি পেশ করেছিলাম। তাতে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেয়া হয়েছিলো। আমরা দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন। আমরা কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব, আমরা চাই ন্যায্য অধিকার।
.
তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও আমলার জন্য আমরা পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রাম করিনি। এ দেশের চাষি, মজুর, ছাত্র সকল মানুষের বাঁচার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছিলাম। কিন্তু জালেমের পর জালেম এসেছে দেশের শাসন ক্ষমতায়। জনগণ মুক্তি পায় নি।
.
জগন্নাথ কলেজ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভিন্সিয়ালাইজড করার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন এদেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করার জন্যই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
.
কারখানার মালিকদের তিনি শ্রমিকদের মুনাফার ভাগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মালিকরা সব মুনাফা লুটেপেটে খেলে এমন দিন আসবে যখন কলকারখানার সবই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। তিনি শ্রমিক নির্যাতনের নিন্দা করেন।
.
তিনি রবীন্দ্র সংগীত প্রচারের সরকারী নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। বেতারকেন্দ্রসমূহকে হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন রবীন্দ্রনাথ বাংলার মানুষের কবি। তাঁর গান রেড

No comments:

Post a Comment