দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনায় একজন নয়, আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা দু’জন ‘বড় ভাই’য়ের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য মাস্টার মাইন্ডের ভূমিকায় ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। আর ঢাকায় ইতালি নাগরিক তাভেল্লা সিজারি হত্যাকাণ্ডের কুশীলব বাড্ডার আলোচিত বিএনপি নেতা সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল কাইয়ুম। যিনি প্রায় এক বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তিনি সেখানে বসেই এ খুনের মিশন বাস্তবায়ন করেন। ওদিকে হাবিব উন নবী খান সোহেল রংপুরের কিলিং মিশন শেষে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। শুধু তাই নয়, তিনি এখন বিমানে লন্ডন পাড়ি দেয়ার জন্য সাজঘরে অবস্থান করছেন। খবর যুগান্তরের।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি খুনের সঙ্গে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেলের জড়িত থাকার ব্যাপারে ‘অকাট্য প্রমাণ’ পেয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এমনকি ঘটনা ঘটিয়ে গ্রেফতার এড়াতে তড়িঘড়ি করে তিনি গা ঢাকা দেন। ৩ অক্টোবর খুনের পরপরই দ্রুত ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। সেখানে নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে না পেরে ২৩ দিনের মাথায় রোববার তিনি লন্ডন পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর শুরু হয় তড়িঘড়ি প্রস্তুতি পর্ব। ধারণা করা হচ্ছে, সোহেল যে কোনো সময় ভারত থেকে লন্ডন চলে যেতে সক্ষম হবেন। এরপর তিনি লন্ডন আছেন এমন খবর শুনলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
এদিকে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা সিজারি হত্যার পেছনে বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুমের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র। বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় বসে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। কাইয়ুম বহু আগে থেকেই পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ানডেট হিসেবে চিহ্নিত। আর সর্বশেষ তিনি বিদেশে অবস্থান করেও ঢাকায় বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিশেষ ভূমিকায় জড়িয়ে পড়লেন। রাজধানীর বাড্ডার সাবেক এ ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন। নানা অপকর্ম আর ক্যাডার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ থেকে তিনি সে সময় নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেননি। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা সচল রয়েছে।
একজন উচ্চপদস্থ গেয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রংপুরে কাচু আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক কুনিওকে খুন করার পরপরই গা ঢাকা দেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল। একপর্যায়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ভারতীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তিনি ঢাকা ও রংপুরে ফোন করে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন। এরই একপর্যায়ে তার ভারতে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে ঢুকেছেন। সূত্র বলছে, কুনিও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোহেলের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোয়েন্দাদের হাতে আসা তার মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডেই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপি নেতা হাবিবুন্নবী খান সোহেলের ভারতে চলে যাওয়ার বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান সোমবার বলেন, ‘তিনি দেশের আকাশ বা স্থল বন্দর ব্যবহার করে দেশ ত্যাগ করেছেন এমন কোনো তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, হাবিবুন্নবী খান সোহেল একজন পরিচিত মুখ। তাই ভিন্ন নামের কোনো পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করলেও ইমিগ্রেশন পুলিশের সেটি জানার কথা।
সূত্র বলছে, সোহেল একজন প্রথম সারির রাজনীতিবিদ হয়েও অনেকটা পেশাদার অপরাধীর মতো কাজ করেছেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি বৈধ পথে বিদেশ যাননি। দেশের কোনো বন্দরও ব্যবহার করেননি। তিনি চোরাই পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পাড়ি জমান। সেখান থেকে তিনি এখন লন্ডনে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছেন। আজ-কালের মধ্যেই লন্ডন চলে যেতে পারেন বলে অনেকটা নিশ্চিত ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাকে ভারতে আটক করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা বলেন, হাবিবুন্নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে অন্তত দেড়শ’ ‘রাজনৈতিক’ মামলা দেয়া হয়েছে। দেশের কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলেই মামলায় তার নাম জড়িয়ে দেয়া হয়। এ কারণে কুনিও হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সতর্কভাবে চলাফেরা করছিলেন। তবে সোহেল ভারতে পালিয়ে গেছেন কিনা বা এখন তিনি কোথায় অবস্থান করছেন এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান এই বিএনপি নেতা।
এদিকে তাভেল্লা খুনের সঙ্গে কাইয়ুমের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার পরপরই কাইয়ুমের ছোট ভাই আবদুল মতিনকে আটক করা হয়েছে। অবশ্য মতিনকে আটকের বিষয়টি আইন-শৃংখলা বাহিনীর তরফে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। তাভেল্লা খুনের কয়েকদিন পর সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে আসা একদল লোক মতিনকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু এখনও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত দুই বিদেশী খুনের ক্লু উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি সূত্র জানায়, বাড্ডার বিএনপি নেতা কাইয়ুম দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় ধর
No comments:
Post a Comment