FB LIke Bottom

Thursday, October 15, 2015

আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন দাসিয়ারছড়ায়।

দাসিয়ারছড়া ছিটমহল
ভারতে যেতে চান না ৫৫ জন
আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন দাসিয়ারছড়ায়।
দোলাচল যায়নি। হয়তো চৌদ্দ পুরুষের ভিটের মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়া সহজ নয়। অশীতিপর দধিরাম বর্মণ ভারতে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন। দেখা হতেই ছড়া কেটে বললেন, ‘মাতৃভূমি মা জননী, স্বর্গের চেয়ে উঁচু।’ কাজেই তিনি মাতৃভূমি ছাড়ছেন না।
দধিরামের মতো সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দাদের কারও কারও এখনো এ দেশে থাকা নয়, ভারতে যাওয়া নিয়ে দোলাচল কাটছে না।
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ার কামালপুর দেবীরপাট গ্রামে গতকাল কথা হচ্ছিল দধিরাম বর্মণ ও তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দধিরাম ভারতে চলে যেতে আবেদন করেছিলেন। ভারত সরকারের দেওয়া ‘অস্থায়ী ভ্রমণ ও পরিচয়পত্র’ও হাতে পেয়েছেন। সেখানে উল্লেখ আছে, ‘এই অস্থায়ী ভ্রমণ ও পরিচয়পত্র বহনকারী বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা এবং ২০১৫ সালের জুলাইয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া দ্বারা নিবন্ধিত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে যাচাইকৃত এবং ৩০ নভেম্বর ২০১৫-তে ভারতে চূড়ান্ত যাত্রা পর্যন্ত ভারতে বহুবার যাতায়াতে অনুমতিপ্রাপ্ত।’ আগামী ১ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নাম নিবন্ধনকারীদের চূড়ান্ত যাত্রা শেষ করতে হবে। এরপর বাংলাদেশে আসতে হলে তাঁদের আসতে হবে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে।
ভিসা নিয়ে আসবেন কি না, তা অনেক পরের কথা। কিন্তু এখনই দধিরামের মতো এই গ্রামের আরও ১১টি হিন্দু পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশেই থেকে যেতে চান। মত পাল্টানোর বিষয়টি তাঁরা ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
চৌদ্দ পুরুষের ভিটের মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়া সহজ নয়। অশীতিপর দধিরাম বর্মণ ভারতে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন। দেখা হতেই ছড়া কেটে বললেন, ‘মাতৃভূমি মা জননী, স্বর্গের চেয়ে উঁচু’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে যেতে নাম নিবন্ধন করেছিলেন এমন ৫৫ জন এখন মত পাল্টে এখানেই থেকে যাওয়ার আবেদন করেছেন। এ ছাড়া ৩৫ জন তাঁদের নামে ইস্যু হওয়া ভারতীয় ‘অস্থায়ী ভ্রমণ ও পরিচয়পত্র’ গ্রহণই করেননি। তাঁরাও থেকে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। গত জুলাই মাসে নির্ধারিত সময়ে দাসিয়ারছড়ার ২৮১ জন ভারতে যেতে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। কুড়িগ্রাম জেলায় ভারতের ছিটমহল ছিল ১২টি। নির্ধারিত সময়ে ভারতে যেতে নাম নিবন্ধন করেছিলেন ৩১৭ জন। এঁদের মধ্যে ১৫৯ জন মুসলিম ও ১৫৮ জন হিন্দু। বাংলাদেশে ভারতের ছিটমহল ছিল ১১১টি। মাথা গোনার পর লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে ভারতে যেতে নাম নিবন্ধন করেছিলেন ৯৭৯ জন। ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহল ছিল ৫১টি। সেখান থেকে কেউ বাংলাদেশে আসতে চাননি।
দাসিয়ারছড়া থেকে ভারতে যেতে আগ্রহী হয়ে পরে মত বদিলয়েছে নারায়ণ বর্মণ, রামপ্রসাদ বর্মণ, বাবুল বর্মণ, শশীভূষণ বর্মণ, গজেন্দ্র বর্মণ, কৃষ্ণকান্ত বর্মণ, মণীন্দ্র বর্মণ, মোহন বর্মণ, মিলন বর্মণ, কামনি বর্মণ, দধিরাম বর্মণ এবং বদিয়ার রহমান ও আবদুল্লাহ রহমানের পরিবার। বর্মণদের সবারই বাড়ি দেবীরপাট গ্রামে। সুপারিগাছের ঘন সন্নিবেশে খোলা মাঠের পাশ দিয়ে গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ি তাঁদের। জ্ঞাতিগোষ্ঠী মিলিয়ে বর্মণরা এখানে প্রায় ৩০ পরিবার। তাঁদের মধ্য থেকে ১৫টি পরিবার ভারতে যেতে নাম লিখিয়েছিল। এখন কেবল চার পরিবার যেতে রাজি। বর্মণরা সবাই কৃষিজীবী। বসতবাড়ি ছাড়াও ২০-২৫ বিঘা পর্যন্ত জমি আছে তাঁদের কারও কারও।
কেন তাঁরা যেতে চাইছেন না, সে বিষয়টি খোলাসা না করলেও আভাসে–ইঙ্গিতে যা বললেন তার মর্ম হলো, অস্থায়ী পরিচয়পত্র নিয়ে তাঁরা ভারতে গিয়ে সেখানকার অবস্থা দেখে এসেছেন। আর যে সুবিধা পাবেন বলে তাঁরা ভেবেছিলেন, তা বাস্তবে মিলছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বললেন, তাঁরা ৩৯ জন একসঙ্গে গত মাসে কোচবিহারের দিনহাটায় গিয়ে দেখে এসেছেন ছিটের লোকজনের জন্য সেখানে কৃষি মেলার পাশে আবাসন তৈরি করা হচ্ছে। পাকা ভিতের ওপর টিনের দেয়াল ও টিনের ছাউনির টানা বাড়ি। ১২ ফুট বাই ১৪ ফুট করে দুটি ঘর পরিবারপ্রতি বরাদ্দ করা হবে। পরিবেশটাও ঘিঞ্জি। তার ওপর কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোচবিহার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তাঁরা দেখা করে জেনেছেন, জমিজমা বরাদ্দের বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত পৌঁছায়নি। অথচ আগে তাঁরা জনপ্রতি নগদ পাঁচ লাখ ভারতীয় টাকা, বাড়ি, কাজের সুযোগ—এমন অনেক প্রাপ্তির কথা মুখে মুখে শুনেছিলেন।
অন্যদিকে এখানে যে জমিজমা আছে, তা-ও বিক্রি হচ্ছে না। বিলুপ্ত ছিটমহলে জমি বিক্রি আপাতত বন্ধ। এদিকে আবার চোখের সামনে দেখছেন এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল—এসব হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের সংযোগ চলে এসেছে। দাসিয়ারছড়া নতুন ইউনিয়ন হচ্ছে। দিনে দিনে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়বে বৈ কমবে না। উপরন্তু, ‘ছিটবাসী’ বলে কেউ আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারবে না। এসব কারণে অনেকেই এখন ভারতে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে এই গ্রামের সুনীল বর্মণ, হরেকৃষ্ণ বর্মণরা যাবেন। সুনীল বললেন, ‘এখন তো আর উপায় নাই। নাম যখন লিখি

No comments:

Post a Comment