FB LIke Bottom

Wednesday, October 14, 2015

বিকল্প উপায়-ভাসমান বাগান

বিকল্প উপায়-ভাসমান বাগান
==================
ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য যোগান দিতে নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বাড়াতে জমির চাহিদাও বাড়ছে। অপরদিকে জন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান, দোকানপাট এবং কলকারখানা তৈরিতে চাষযোগ্য জমি ব্যবহারের ফলে দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য জমি। তদুপরি নদীভাঙ্গন, জলোচ্ছাসে স্থল ভাঙ্গন এবং লবন পানির প্রভাবে আবাদি জমির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। পরিসংখ্যান মতে প্রতিদিন ২০০ হেক্টর জমি অনাবাদী হচ্ছে বা হ্রাস পাচ্ছে। তাই বিকল্প চাষ পদ্ধতির কথা ভাবার সময় এসেছে।
এমন একটি অন্যতম ফলপ্রসু বিকল্প ব্যাবস্থা হচ্ছে ভাসমান বাগান। প্রাগ-হিস্পানিক যুগ থেকে এজটেক গোত্র এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আসছে। তাদের ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় চিনামপাস (chinampas)। গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি জেলা ও উপকূলীয় অন্যান্য এলাকায় বর্ষা মৌসুমে এই ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় যা এখন সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নীচু অঞ্চলে চালু হচ্ছে। গোপালগঞ্জে একে গাউতা বলে। তাছাড়াও অঞ্চলভেদে একে বায়রা, গেটো বা ধাপ চাষাবাদও বলে। বাংলাদেশে প্রায় ৩০০০ হেক্টর জলাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে দরিদ্র এবং ভুমিহীন কৃষকগন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ এবং সহায়তা করলে দেশের সমগ্র জলাবদ্ধ অঞ্চলে (প্রায় ৭০,০০০হেক্টর) ভাসমান চাষ করা সম্ভব। জলাবদ্ধ অঞ্চল বলতে আমরা খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওড়, পুকুর-দীঘি প্রভৃতিকে বুঝব। কাপ্তাই লেকের বিশাল এলাকা জুড়ে এই পদ্ধতি ব্যাবহারের আওতায় এনে প্রান্তিক কৃষকদেরর ভাগ্যের চাকা ঘুরান যেতে পারে। প্রতিটি ভাসমান বাগান তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’ নামে ভাসমান সবজি বাগান চালু করেছে।
ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য প্রথমে ধাপ তৈরি করতে হবে। ধাপ তৈরির জন্য পানির গভীরতা মুখ্য বিষয় নয়। যে কোন গভীরতায় ধাপ তৈরি করা যায়।
ধাপ তৈরির কৌশল:
কচুরিপানা পঁচিয়ে জৈব সার (কম্পোস্ট) তৈরি করে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। এতে করে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এ ধরণের সার তৈরিতে কৃষকরা মনোযোগী হচ্ছেন। তাদের অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে পারছেন। এ ধরণের সার প্রয়োগ করে হাওরে ভাসমান সবজির চাষাবাদে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এই জৈব সার দিয়ে ভাসমান বাগানের ধাপ তৈরি করা যায়।
১। প্রথমে লম্বা একটা বাঁশ কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দিতে হবে।
২। ঐ বাঁশের চারপাশ থেকে কচুরিপানা টেনে এনে জড়ো করে প্রথম ধাপ তৈরী করতে হবে। এরপর ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করে প্রথম স্তরের উপর আবার কচুরিপানা বিছাতে হবে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জড়ো করা কচুরিপানা পচে যাবে। এভাবে ভাসমান পদ্ধতিতে ধাপ তৈরি করতে হবে।
৩। যতক্ষন পর্যন্ত কাঙ্খিত উচ্চতা এবং দৈর্ঘ্যের ধাপ প্রস্তুত করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পচা কচুরিপানা বিছিয়ে ধাপের উচ্চতা বাড়াতে হবে।
৪। কৃষক ইচ্ছা করলে তার ধাপকে ভাসিয়ে অন্য কোথাও নিতে পারে।
৫। শেষ ধাপে পঁচা কচুরিপানার উপর কিছু মাটি ঢেলে বীজতলা বা চারাতলাা তৈরী করতে হবে।
বীজ বা চারা বুনার পর আর পানি দেয়ার কোন ঝামেলা নেই। পর্যাপ্ত জৈব সার থাকায় গাছের বৃদ্ধি এবং ফলন আশাতীত হয়।

No comments:

Post a Comment