FB LIke Bottom

Sunday, October 18, 2015

মতলব উত্তরে সবজি চাষ করে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন

মতলব উত্তরে সবজি চাষ করে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন
মতলব কণ্ঠ ডেক্স:
অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আজ সমান তালে এগিয়ে চলেছে। এমন এক সময় ছিল যখন নারীরা শুধু পুরুষদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু সমাজ পরিবর্তন হয়েছে, সভ্যতার উন্নতি হয়েছে আর নারীরা তাদের গণ্ডির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সমাজ, দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরুষ এবং নারীকে সমান অধিকার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তেমনিভাবে কৃষিকাজ ও বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে অনেক নারী আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। আজ তারা অন্ধকার থেকে আলোর পথে ধাবিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে নারী এক সময় নিজ বাড়িতে স্বামীর আদেশে রান্না আর সন্তান লালন-পালন করে সময় পার করতো। সেই নারীই আজ সমাজ উন্নয়ন এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কৃষিকাজ করে পরিবারকে এনে দিয়েছে অন্যরকম সুখ-শান্তি। কৃষি কর্মক্ষেত্রে নারীর সন্তানরা আজ পড়াশোনা করে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী আবার কেউ আইনপেশা, কেউ বা আবার সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করে নিজের জীবন পাল্টে দিয়েছে।
এমনি কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়েছে উপজেলায় যারা কৃষিকাজ করে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন। এক সময় যেসব নারীর পড়নে ছিল ছেঁড়া কাপড়, দু’বেলা খাবার জুটতো না। সেসব কৃষি কর্মজীবী নারীর বাড়িতে আজ পাকা ঘর, পাকা পায়খানা, ঘরে সৌরবিদ্যুৎ, টেলিভিশন, মুঠোফোন, ফ্যান, বাসায় গ্যাস, পরনে মোটা কাপড় এ হলো কৃষি কর্মজীবী নারীর বর্তমান অবস্থা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলসহ কয়েক হাজার নারী বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। এ সব নারীরা ধান বপন ও কাঁটা থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির ফসল ও সবজির আবাদ করে পুরো সমাজকেই পাল্টে দিয়েছে।
এলাকায় সরেজমিন ঘরে কয়েকজন নারী কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরেন। তাদের মধ্যে একজন নারী কৃষক হাফিজা বেগম (৫০) জানায়, এক সময় তার স্বামীর সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। একবেলা ভাত বা রুটি জুটলেও অন্যবেলা না খেয়ে থাকতে হতো। দু’ মেয়ে ও দু’ ছেলেকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের সহযোগিতায় ও পরামর্শে তিনি কৃষি কাজের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কৃষির উপরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। আজ নারীরা কৃষি কাজের উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সিআইজিভুক্ত হয়েও অর্থনৈতিকভাবে একত্রিত হয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসছে। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে তার স্বামীকে অন্যের জমি বর্গা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। স্ত্রীর কথা মতো তার স্বামী আইনুল হক ৭৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে একপাশে ধান চাষ এবং অপর পাশে সবজির আবাদ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে দিন-রাত অনেক পরিশ্রম করেন। হাফিজা বেগমের সবজির মধ্যে লাউ, চালকুমড়া, টমাটু, ঝিঙা, শসা, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, কপিসহ নানা প্রজাতির শাকসবজি রয়েছে। ভোর থেকে বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে বেপারীরা (পাইকার) এসে নগদ টাকায় সবজি কিনে নিয়ে যায়।
হাফিজা বেগম বলেন, আমার স্বামী সবজি বিক্রির টাকা হাতে নেয় না। আমার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে সংসারের হাল। সংসারের খরচ মিটিয়ে ছেলে-মেয়েকে কলেজে ও স্কুলে পড়াচ্ছে। সপ্তাহে খরচবাদে তার ৪/৫ হাজার টাকা তার মুনাফা থাকে। এখন তাদের সুখের সংসার।
কৃষানীদের মধ্যে মিনা বেগম বলেন, পুরুষের পাশাপাশি সমান কাজ করেও আমরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। স্বামীর সঙ্গে সমান কাজ করলেও অনেক সময় স্বামী আমাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন। ফসল ও সবজি বিক্রির টাকা হাতে দেয় না। স্বামী নিজ হাতে খরচ করে। আমি টাকা চাইলে তিনি নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। তার মতে, আমি নারী বলে কি আমার অধিকার নেই। ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment