FB LIke Bottom

Friday, October 9, 2015

রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হল হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।


রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হল হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সতী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুকে তিনি একমাত্র পরিত্রানের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তা, হ্যা মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরই বা রেহাই দিব কেন?
ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। এখন
আর অবাধ্য মেয়ে নয় দস্তরমত খানদের খুশী
করতে শুরু করল। ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল।
বেশীদিন লাগল না। অল্প ক'দিনেই নারীলোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনী ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করল। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করল পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য।
এক পর্যায়ে বিশ্বাস ভাজন ভাগীরথী কে ওরা নিজ গ্রামে যেতেও দিল। আর কোন বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে। এরই মাঝে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়েও গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর
সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন
ভাগীরথী খানসেনাদের নিমন্ত্রন করল
তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হল যথারিতী। ৪৫ জন খানসেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগনারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু
তার মাঝে মাত্র ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল,কুকুর, শকুনের খোরাক হয়েছে।
এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি।
ওরাও বুঝেছে এটা ওরই কীর্তি।
কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা
মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে
তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া
হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানত না ওর জন্যে
আরো দু:সহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করে আছে।
একদিন রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ল ভাগীরথী। তাকে নিয়ে এল পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে।
খান সেনারা এবার ভাগীরথীর উপর তাদের
হিংস্রতার আয়োজন করল। এক হাটবারে
তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাড় করানো হল
জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার
অংগাবরন খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা।
তারপর দু'গাছি দড়ি ওর দু'পায়ে বেধে একটি
জীপে বেধে জ্যান্ত শহরের রাস্তায় টেনে
বেড়াল ওরা মহাউৎসবে। ঘন্টাখানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও তার দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।
এবার তারা দুটি পা দু'টি জীপের সাথে বেধে নিল এবং জীপ দুটিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু'ভাগ হয়ে গেল। সেই দু'ভাগ দু'জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই
ফেলে রেখে গেল সেই বিকৃত মাংসগুলো।
একদিন-দুদিন করে মাংসগুলো ঐ রাস্তার
সাথেই একাকার হয়ে গেল একসময়। বাংলা
মায়ের ভাগীরথী আবার এমনিভাবে মিশে
গেল বাংলার ধুলিকণার সাথে।
কেবল ভাগীরথী নয়, আরো দু' জন মুক্তিযোদ্ধাকে ওরা এভাবেই হত্যা করেছে পিরোজপুর শহরে।“
-মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কত প্রাণ হলো
বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।

No comments:

Post a Comment