FB LIke Bottom

Tuesday, October 6, 2015

কখনো ভাবতে পারিনি আবার আমাদের দেখা হয়ে যাবে।

কখনো ভাবতে পারিনি আবার আমাদের দেখা হয়ে যাবে। শেষবার যখন তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছিলাম তখন কথা দিয়েছিলাম, আর কখনোই তার সামনে গিয়ে দাড়াবো না আমি।
তারপর কেটে গেছে দশবছর । সময়ও বদলে গেছে অনেক। আমিও বদলে গিয়েছি।
আজ হঠাৎ করেই আবার দেখা হয়ে গেল দুজনার। অফিস ছুটির পর ফুটপাত ধরে হাটতে ছিলাম। হঠাৎ করেই এক নারী আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে, তুমি! কোথায় যাচ্ছ?
আমি তার দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হই। সোফিয়ার শ্যামলা মুখে মিষ্টি হাসির রেখা। বয়স ওর যৌবনে ছাপ ফেলতে পারেনি। তেমনি রয়ে গেছে যেমনটা দেখেছিলাম দশ বছর আগে। চোখে দুষ্টামীর সেই হাসি এখনো আছে। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিই। আমার বুকের ভেতর যে লুকায়িত অশ্রুর সমুদ্র আছে, সেখানে প্রলয় উঠল যেন। মনে হল চারপাশের ব্যস্ত নগরের সকল কোলাহল থেমে গিয়েছে। নিশ্চুব দাড়িয়ে রইলাম। সোফিয়া খানিকটা ঝুকে এসে বললো, কি হল আমাকে তুমি চিনতে পারো নাই?
ফ্যাকাসে হেসে বললাম, চিনবো না কেন ? তুমি ভাল আছ?
ও ম্লান হেসে দীর্ঘশ্বাস চেপে বললো, হুম ভাল আছি!
সোফিয়াকে আমি অনেক ভালবেসে ছিলাম। যতটা ভাল পৃথিবীর কেউ কোনদিন বাসেনি। আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত কনিকায় ও মিশে গিয়েছিল। আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে ছিল কেবল সোফিয়া আর সোফিয়া। আকাশেও তত তারা নেই যতবার তাকে আমি ভালবাসি বলেছি। অথচ ও একদিন বিনা নোটিশেই আমার জীবন থেকে সরে গেল। কি অভিযোগ ছিল ওরে হাজার বার জিজ্ঞাসা করেও তার উত্তর পাইনি। বুঝতে পারিনি কি ভুল ছিল আমার।
ওর ওমন রহস্যময়ী আচরন তখন আমার সাজানো পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে ফেলে ছিল। নিষেধ সত্বেও ওর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম। বেহায়ার মত ওদের বাড়িতে অকারন গিয়ে উপস্থিত হতাম। ও আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। চারপাশের সব মানুষ আর প্রকৃতি তেমনি ছিল। শুধু ও একাই বদলে গিয়েছিল। অপমানের যন্ত্রনায় নীল হয়ে গিয়ে ছিলাম। ঋতুর পরিবর্তনে পুরানো পাতারা যেমন করে গাছ হতে ঝরে পড়ে তেমনি করে আমি ওর জীবন থেকে নিঃশব্দে ঝরে পড়েছিলাম।
সোফিয়ার হাসির শব্দে চমকে উঠি। ও বলে তুমিতো এখনও তেমনি আছ, ভাবুক টাইপের। এখনো কবিতা- টবিতা লিখো নিশ্চয়?
আমি উত্তর না দিয়ে ম্লান হাসি। আমার খুব অভিমান হয়। ইচ্ছে হয় দৌড়ে চলে যাই। ওর সাথে কথা বলতে ভারি ক্লান্তি লাগে। ১০ বছর ধরে অভিমানের যে পাহাড় বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছি তা আজ আর প্রকাশ করার ইচ্ছে আমার নেই।
প্রকৃতি সব সময় শূন্যস্থান পুরন করে নেয় বলে শুনেছি। কিন্তু ওর বিরহে আমার মনের ভেতর যে গভির ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা তেমনি রয়ে গেছে। শুনে ছিলাম নারীরা নাকি মায়াবতী হয়। কিন্তু কি আশ্চর্য ও যখন হটাৎ করেই বলে দিল অনেক হয়েছে আর নয়। তখন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল ও যেন শক্ত পাথরের প্রতিকৃতি।
আমি বোধহয় তখন পাগল হয়ে গিয়ে ছিলাম। বারবার মনে হত বেচে থেকে কি লাভ? আমি পারিনি, কিছুই করতে পারিনি। শূন্য পকেট। ধুসর বাস্তবতা আর হতাশার কুয়াসায় ঢেকে গিয়ে ছিল আমার পৃথিবী।
সোফিয়া হটাৎ করেই আমার হাত ধরে । যেন আমাদের মাঝে কোন দেয়াল নেই। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু ওর হাতের ছোয়া আগের মত আমাকে আর পুলকিত করলো না। সাপের মত শিতল মনে হল। ও বলে, কি করছো? ব্যবসা নাকি জব?
– চাকুরী করছি। ঐযে নীল ভবনটা দেখছো ওর ছয় তলায় আমার অফিস।
ও আমার হাত অনুসরন করে তাকায়। ‘তুমি ঢাকায় কী করছো?’ পাল্টা প্রশ্ন করি। ও অন্যমনস্ক হয়ে যায়। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। হতাশা আড়ালের বৃর্থা চেষ্টা করে। মৃদ্য হেসে বলে, গৃহবধু ছিলাম তিন বছর। তারপর সেপারেশন হয়ে গেল। বড় আপার উৎসাহে চাকুরি করছি। এনজিও কোম্পানি। বদলীর চাকুরী। সারা দেশ ঘুরেছি। এখন মাস দুই হল ঢাকায় আছি।
সোফিয়ার মুখে ক্লান্তি আর বিষন্নতার ছায়া দেখি।
– চল সামনের রেষ্টুরেন্টে বসি।
ও মাথা দুলিয়ে বলে চল।
কি খাবে? প্রশ্ন করি। ও হেসে বলে, তোমার যা খেতে ভাল লাগে তার অর্ডার দাও। ওর কথা শুনে বলি, এই প্রথম আমার যা পছন্দ তাতে তুমি সম্মতি দিলে।
কেন অর্যথা লজ্জা দিচ্ছ?
সরি‌ । থাকছো কোথায়?
ফার্মগেট কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে।
হটাৎ করেই আমার মোবাইলে রিং বেজে উঠে। বন্ধু আনিস আর আমি একই ফ্লাটে থাকি। ও বলে, কি হল আমিতো নিউ মার্কেটে দাড়িয়ে আছি। তুমি কোথায়?
কেন বলতো?
তোমাকে না বললাম আজ একটা প্যান্ট কিনবো। ভুলে গিয়াছো নাকি?
ঠিক আছে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি।
ফোন রেখে ওর দিকে তাকাতেই সোফিয়া প্রশ্ন করে, কে ফোন দিল তোমার বউ নিশ্চয়।
– আরে না আমিতো বিয়েই করিনি!
শুনে ও খুব অবাক হয় যেন। বলে, কেন বিয়ে করনি। বয়স তো কম হয়নি।
আমি অন্যদিকে তাকাই এসব নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে আমার ভাললাগেনা। অস্বস্তি হয়। ও নাছোড় বান্দা সেজে নানান প্রশ্ন করে যায়। শেষে এক সময় বলি, সোফিয়া আমি কখনো কারো শরীর পেতে চাইনি, মন পেতে চেয়ে ছিলাম। পাইনি। আমার জীবনে যে মরুভুমি তুমি সৃষ্টি

No comments:

Post a Comment