FB LIke Bottom

Sunday, October 4, 2015

উপসচিবের সঙ্গে পুলিশের ‘দূর-ছাই, ভাগ শালা’ ব্যবহার

উপসচিবের সঙ্গে পুলিশের ‘দূর-ছাই, ভাগ শালা’ ব্যবহার
নিউজওয়ার্ল্ডবিডি.কম - ০২.১০.২০১৫
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সাল। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে ঈদ উল আজহার ছুটি কাটানোর জন্য রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। আজ সকাল নয়টার দিকে আমাদের গাড়িটি আশুলিয়া বাইপাইল মোড় থেকে সামান্য পূর্ব দিকে আটকে আছে। গাড়িতে উঠেছি রাত সাড়ে তিনটায়। প্রায় সাত ঘন্টা ধরে কম বেশি একই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের শ্যামলী পরিবহনের গাড়িটি। সূর্যটা আমাদের দিকে একটু তেরসাভাবে কিরণ দিচ্ছে। গাড়ির কাঁচের জানালা ভেদ করে শেষ ভাদ্রের আলো আসছে আমাদের বাসের ভিতর। বাসটি দ্রুত গরম হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে ফেরিওয়ালারা খাদ্যদ্রব্য বিক্রির জন্য হাঁক ডাক শুরু করেছে। শুকনা খাবারের সাথে পাওয়া যাচ্ছে কোক, ফান্টা, টাইগার কিংবা প্রাণগ্রুপের ফ্রুটি ম্যাঙ্গো জুস। তরল খেয়ে খেয়ে তলপেটে চাপ পড়েছে সবার।
সবাই যে যার মতো এদিক ওদিক গিয়ে সামান্য আড়ালে আবডালে তলপেটের তরল টুকু বের করে দিয়ে স্বস্তি ক্রয় করছে। বিনিময়ে রাস্তার ধার ভেসে যাচ্ছে যাত্রীদের মৌসুমি মুত্র দিয়ে।
আমি একজন ঊধ্বর্তন সরকারি কর্মকর্তা। অন্যদের মতো আমি চাইলেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যাকরণহীনভাবে আমার তলপেট খালি করতে পারি না। পদের ভার, নাগরিক সৌজন্যবোধ আর অভ্যাসের তর্জনী সর্বদাই আমার দিকে তাক করা। আমার কষ্টের কথা পত্রিকায় হাস্যকর হেডলাইন হয়; আমার বঞ্চনা অন্যদের সমালোচনার বিষয় হয়। তাই আমাকে প্রাকৃতিক কর্মেও নূন্যতম শালীনতা বজায় রাখতে হয়।
ডান দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ছোট খাট পুলিশ বক্স। ট্রাফিক পুলিশের বক্স, নাকি থানা পুলিশের কোন স্থাপনা- বোঝা গেল না। ছোট খাট- কিন্তু বাইরের চেহারা সুন্দর। থাই কাঁচের স্লাইডিং দরোজা দিয়ে আটকানো অন্দর মহলে নিশ্চয়ই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে? মুহূর্তের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিলাম, ঐ পুলিশ বক্সে গিয়েই তলপেটের ক্রমবর্ধমান তরল সম্ভার প্রয়োজনমত হ্রাস করা যায়।
বেশ স্বস্তির আমেজ নিয়ে অগ্রসর হলাম পুলিশ বক্সের দিকে। ভাবলাম, ঢুকেই তাদের পরিচয় দিব। সরকারের পঞ্চম গ্রেডের (উপ সচিব) একজন কর্মকর্তা তাদের মাঝে আকস্মাৎ উপস্থিত হওয়ায় তারা নিশ্চয়ই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। সেই কর্মকর্তা যদি খোদ পুলিশেরই কেউ হয় তাহলে অধীনস্তরা নিশ্চয় ডান হাত কপালে তুলে সেলুট ঠুকবেন, কেউবা আবার বসা অবস্থাতেই হাত-দুটো সোজা করে ‘সিট-টু-সান হবেন। কারণ, এটা পুলিশের সাধারণ সৌজন্যবোধ।
ধীর পদক্ষেপে গিয়ে পুলিশ বক্সের স্লাইডিং ডোরে হাত দিলাম। আস্তে আস্তে খুলতে থাকলাম দরোজাটি। স্লাইডের অর্ধেক মাত্র খুলে গেল। কিন্তু দরোজা খুলতেই আমার কল্পনার নিশার অবসান ঘটল। একজন ফর্সা চেহারার পুলিশ ইন্সপেক্টর তার কন্ঠের সকল কর্কশতা একত্র করে রেজিমেন্টাল ভঙ্গিতে বললেন, ‘এই যান! যান! যান, বলছি!
আমি সম্পূর্ণ ভেবাচেকা খেয়ে কিছুক্ষণ স্লাইডিং ডোরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবছি পুলিশ ইন্সপেক্টরের এই আচরণের মাঝখানে আমার পরিচয়টা প্রকাশ করা সমীচীন হবে কিনা। একবার ভাবলাম, পরিচয়টা দিয়ে তাদের লজ্জিত করি। পরের বার ভাবলাম, না, আমি তো লজ্জিত হয়েছি। এবার পরিচয় দিয়ে তাদেরও লজ্জিত করা উচিৎ হবে না। একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা তা করতে পারেন না।
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছি পুলিশ বক্সের ভিতরের দিকে। দরোজাটি সম্পূর্ণ খুলতেও পারছি না, আবার বন্ধও করতে পারছি না। ফর্সা চেহারার সুঠামদেহী পুলিশ ইন্সপেক্টর আবার খেকিয়ে উঠলেন, ‘এই কি হল? যান ! যান বলছি , যান’।
আমি সুবোধ বালকের মতো অপমান হজম করে থাইয়ের দরোজাটি যার পর নেই অধিকতর সতর্কতা ও আদবের সাথে বন্ধ করলাম। ভাবলাম, দরোজা বন্ধ করতে শব্দ হলে তারা যদি আবার পিছু ধাওয়া করে? যদি তলব করে আমার ত্রস্ততর অভদ্রতার! তখন ঘটবে আবার অন্য এক বিপত্তি। আমি যে অপমানিত হয়েছি, এখন তারা সেটা জানেন না- এখন হয়তো বলা যাবে-
না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে।
ওগো, কে আছে চাহিয়া শূন্য পথপানে–
কাহার জীবনে নাহি সুখ, কাহার পরান জ্বলে॥
পুলিশ বক্সের পিছনে একটি মার্কেট। নিচ তলায় তেমন কোন ভিড় নেই। ভাবলাম, যাই ওখানে নিশ্চয় ন্যূনতাম শালীনতার কোন আড়াল থাকবে যেখানে প্রাকৃতির কর্মটা সারা যাবে। মার্কেটে গিয়ে একটা নির্জন গলি পেলাম। অবশেষে ওখানেই শরীরের তরল বর্জ্য বিসর্জন দিয়ে রাজ্যের অস্বস্তিগুলো দূর করলাম।
আসার পথে দেখি, এক কনস্টেবল একটি ওয়ারলেস সেট নিয়ে পুলিশ বক্সের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। সামনের ডাবল কেবিন পিকআপটি দেখে মনে হল, এই কনস্টেবল ভিতরের কোন অফিসারে সে অর্ডারলি হবে। কিন্তু ভিতরে কোন এএসপি পাইনি। ধরে নিলাম, ঐ কর্কশকন্ঠের ইন্সপেকটর সাহেবেরই সে অর্ডারলি হবে।
অর্ডারলির কাছে অনেকটা গলবস্ত্র হয়েই গেলাম। আদবের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তার হাতে আমার একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ভাই এই কার্ডটা ভিতরের অফিসারদের

No comments:

Post a Comment