FB LIke Bottom

Wednesday, October 7, 2015

অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষমা করা কঠিনই হবে

অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষমা করা কঠিনই হবে
গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে সিদ্ধান্তটি অবধারিতই ছিল। একেকটি দিন গড়াচ্ছিল আর একে একে নিভছিল আশার দেউটি। তারপরও অনেকের মনের কোণে আশার সলতে নিশ্চয়ই জ্বলছিল। নইলে নিশ্চিত ব্যাপারটি জানার পরও এমন হতাশার স্রোতধারা কেন বইবে বাংলাদেশের ক্রিকেট আঙিনায়!
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল ঢাকায় থাকতেই গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক খুন ও বাংলাদেশ সফরের স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের নিজ নিজ রাজ্য দলে ফেরার নির্দেশনা দেওয়ার পর অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ার মনোভাব। তারপরও বিসিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার যখন সিদ্ধান্ত জানাতে অনুমিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিচ্ছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, মেলবোর্নে বৈঠক চলছিল দফায় দয়ায়, মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে বিসিবি কর্তারাও তখন আশায় বুক বাঁধছিলেন। হয়তো ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে বলেই সিদ্ধান্ত নিতে এত আলোচনা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উদ্বিগ্ন অপেক্ষার অবসান বৃহম্পতিবার বিকেলে। বাংলাদেশ সময় সোয়া ৫টা নাগাদ আশাভঙ্গের ঘোষণাটি আসে মেলবোর্ন থেকে, আসছে না অস্ট্রেলিয়া।
নিরাপত্তা নিয়ে সফর বাতিল ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। পাকিস্তানের কথা বাদই থাকল। বিশ্বকাপের মতো আসরে পর্যন্ত সফর বাতিল হয়েছে। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোমা হামলা করল এলটিটিই। পরের মাসে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে কলম্বো যায়নি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ায় যায়নি নিউজিল্যান্ড, রবার্ট মুগাবে সরকারের সঙ্গে ঝামেলার কারণে জিম্বাবুয়েতে যায়নি ইংল্যান্ড।
তবে এবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা হলে, সেটাকে বলা যায় ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি।’ খুব একটা ঝুঁকি না নিয়েই বলে দেওয়া যায়, এমন কিছু আগে দেখেনি ক্রিকেট। কারণ আগে যে সব দেশে সফর বাতিল হয়েছে, সে সব দেশের সঙ্গে আমাদের প্রেক্ষাপট মেলানো যাবে না কোনোভাবেই। অস্ট্রেলিয়ার সফর পেছানো ছিল একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাত। গত শনিবার তারা যখন নিরাপত্তার ঝুঁকিতে সফর পেছানোর কথা জানাল, শুধু বাংলাদেশ নয়, চমকে গিয়েছিল সম্ভবত পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশে এই সময়ে নিরাপত্তার ঝুঁকি? কীভাবে সম্ভব! প্রশ্ন আর বিস্ময় প্রায় সবাইকে ছুঁয়ে যাওয়ার কথা।
পেছনে কারণ অনুসন্ধানে আমাদের নিজেদেরই দায় দেখতে পারেন অনেকে। ‘দেশে জঙ্গি আছে’ বা ‘জঙ্গি নেই’, ‘অমুকের অস্তিত্ব আছে, তমুক নেই’, ‘এটা হয়, ওটা হয় না’… আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের অনেক কথার উদাহরণ টেনে অনেকে বলতে পারেন যে, সমস্যা আমরাই তৈরি করেছি। তবে এই সব কিছু মাথায় রেখেও দিনশেষে বলতেই হবে যে, অস্ট্রেলিয়া সফর পেছানোর সময় বাংলাদেশের যা অবস্থা ছিল, এতটা শান্ত ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি গত কয়েক বছরে ছিল কিনা সন্দেহ। অস্ট্রেলিয়া যেভাবে সফর পেছাল, ‘আউট অব দা ব্লু’ কথাটির জন্ম এমন মুহূর্তের জন্যই।
নিরাপত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়া সফর পিছিয়েছে, অনেকের কাছেই এটা ছিল অবিশ্বাস্য। তারপরও তারা অস্ট্রেলিয়া দল বলেই নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান বা অন্য কিছু ভাববার অবকাশ খুব একটা ছিল না। প্রফেশনাল দল হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে আদৃত অস্ট্রেলিয়া; মাঠের ভেতর-বাইরে তাদের ক্রিকেট-দর্শন, ধরন, কাঠামো ও ক্রিকেট-ভাবনা, সবই অনুকরণীয়। আর নিরাপত্তার ব্যাপারে বরাবরই তারা খুঁতখুতেঁ। এ জন্যই ব্যাপারটি জানার ও বোঝার অপেক্ষা ছিল।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা পরিদর্শক দল বাংলাদেশে আসার পর বিসিবি যে তৎপরতা দেখিয়েছে, সেটিকে অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য বললেও কম হবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে ও দেড় দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‌্যাব, পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সব নিরাপত্তা সংস্থা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের মানুষ বলেই এত দ্রুত এ সব সম্ভব হয়েছে। বোর্ড প্রধান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেনও যে, নিউ ইয়র্ক থেকেই প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন পুরো প্রক্রিয়ায়।
সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা হুমকির কথা জানায়নি অস্ট্রেলিয়া। সেটা না জানানোর অধিকার তাদের রয়েছে। বিসিবির বিভিন্ন সূত্র থেকে যতদূর জানা গেছে বা ইঙ্গিত মিলেছে, বাংলাদেশে স্থায়ী অস্ট্রেলিয়ান ও নিউজিল্যান্ডাররা প্রতি বছর একটি অনুষ্ঠানে মিলিত হন, এর নাম ‘গ্লিটার বল।’ সে অনুষ্ঠানে হামলার কোনো পরিকল্পনা হয়তো ছিল। ২৬ বছর ধরে চলে আসা সে অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে এবার। তারপরও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটি দেখা হয়েছে। সবগুলো নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দলকে অভয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিজে বলেছেন, “আমি দায়িত্ব নিচ্ছি, আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।”
গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যার পর চিত্র অবশ্যই কিছুটা পাল্টেছে। অস্ট্রেলিয়ার শঙ্কিত হওয়ার কারণও রয়েছে। তবে সেই শঙ্কার এমন উচ্চতা ছোঁয়ার কোন

No comments:

Post a Comment