দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের প্রতিক্রিয়া লিখেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য তার স্বাক্ষরিত ওই লেখায় তিনি শুধুমাত্র মন্ত্রী হিসেবে না, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ওই ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম লিখেছেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর জায়গা থেকে লিখছি না”, লিখছি এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে- যে দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই কিন্তু- চাঁদে কারো মুখ দেখার গুজবে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ, আবার একটি পোস্টের কারণে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) বৌদ্ধ বিহারে চলেছে হামলা- আমরা সব ভুলে গেছি।'
ফান্সে সন্ত্রাসী হামলার পরে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, 'বহু দেশ আজকের দিন পর্যন্ত সে দেশগুলোর মানুষের নিরাপত্তার জন্য “ইন্টারনেট” পর্যন্তও সাময়িক বন্ধ রেখেছে। সেদেশের নাগরিকেরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তা মেনে নিয়েছে, “টু” শব্দটি করেনি। হয়তো তারা ভাবছেন- “সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দূর্ঘটনা ঘটার আগে “সাময়িক বন্ধ” রাখলে এই মানুষগুলোর জীবন (FRANCE এর) বাঁচানো যেত কি?'
প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমের আরেকটি আলোচিত ঘটনা উল্লেখ করে নৈতিক অবস্থানের উদাহরণ দিয়ে লিখেছেন, 'আরেকটি ঘটনা বলি, পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া এক চিত্রগ্রাহক একটি ছবি তুললেন ক্ষুধার্ত এক শিশু এবং তার মুখোমুখি একটি শকুনের। ছবি হিসাবে অসাধারণ। তার সামনে ২টি বিকল্প ছিল- হয় তিনি ছবিটি তুলবেন, নয়তো শিশুটিকে দ্রুত তুলে নিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে যাবেন। তার কাছে প্রথম বিকল্পটি আকর্ষণীয় মনে হলো। তিনি তুললেন অসাধারণ ছবিটি। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শিশুটি মারা গেল। চিত্রগ্রাহক পেলেন “পুলিৎজার পুরস্কার”। কর্মের এক বিরল স্বীকৃতি। কিন্তু বিবেক তাকে তাড়া করলো সর্বক্ষণ- “যদি তখন ছবি না তুলে শিশুটিকে তিনি নিয়ে যেতেন নিকটবর্তী অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে, অন্তত বাঁচাবার চেষ্টা তো করতে পারতেন”! অনুশোচনায় আত্মহত্যা করলেন তিনি। আমরা বড় বেশি কঠিন, কঠোর হয়ে গেছি- তাই মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টাকারীকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। ধন্যবাদ সকলকে যারা মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করেন, তিরস্কার করেন। এ জন্যই হয়ত মানুষের জায়গায় আসছে রোবট। রোবট হবার পথ থেকে খুব দূরে কি আমরা?'
প্রতিমন্ত্রী তারানা গণমাধ্যমকে তার বক্তব্যের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বুঝে লেখার পরামর্শ দিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। তার বক্তব্য যেনো খন্ডাংশ আকারে গণমাধ্যমে প্রকাশ না পায় তাও অনুরোধ করেন তিনি। ফেসবুকসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ সাইট বন্ধ করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা চারটি পয়েন্টে তিনি যা লিখেছেন, তা নিম্নরুপ-
প্রথমতঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অস্থায়ীভাবে, সাময়িক সময়ের জন্য জননিরাপত্তার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে, সরকারের জনজীবনের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বের অংশ হিসাবে (আবারো উল্লেখ করছি) সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ লক্ষ্য করবেন এবার শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ের আগে বা পরে দেশে বড় ধরণের কোন নাশকতা ঘটেনি। ধর্মযাজকের উপর হামলাকারী গ্রেফতার হয়েছে। বিশিষ্টজনদের প্রাণনাশের হুমকিদাতাও গ্রেফতার হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন নাশকতার জন্য কতজন পরিকল্পনাকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য এবার গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
তৃতীয়তঃ না, “মাথা ব্যথার জন্য আমরা মাথা কেটে ফেলিনি”- কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সঙ্কেত ও সরকারের নির্দেশনা পেলে এসব মাধ্যম খুলে দেয়া হবে। সরকারের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেবার জন্য একটি প্রাণহাণিও ঘটে তখন কিন্তু জনগণ সরকারকেই দোষারোপ করেন, করবেন। তাহলে জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকার সাময়িক সহযোগিতা চাইলে তা দিতে আমরা কুণ্ঠিত হব কেন?
চতুর্থতঃ বিকল্প ব্যবস্থা কি নেয়া যেত না? আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রায় সাড়ে চার মাস। এর মধ্যে সিম/রিম নিবন্ধন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম জোরদার করা, ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, টেলিটককে সক্ষম করা, বায়োমেট্রিক্স চালু করা, ডাক বিভাগের জন্য E-Cash transfer সম্প্রসারণ ও ১১৮টি যানবাহন ক্রয় প্রক্রিয়া, এমএনপি চালুর জন্য প্রক্রিয়া শুরুসহ দায়িত্ব পাবার ৩ দিনের মাথায় “প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তিকে মোকাবিলা” করার জন্যও কাজ শুরু করেছি।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে তিনি খুব অল্পসময় পেয়েছেন উল্লেখ করে তারানা হালিম লিখেছেন, প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তিকে মোকাবিলার জন্য আমি প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছ
No comments:
Post a Comment