FB LIke Bottom

Monday, July 4, 2016

কূটনীতিকপাড়ায় হত্যাকাণ্ড: ষড়যন্ত্রের গোঁড়া কোথায় ?

কূটনীতিকপাড়ায় হত্যাকাণ্ড: ষড়যন্ত্রের গোঁড়া কোথায় ?
‘হলি আর্টিজান’ নামকরণের পেছনে শান্তির বারতা ছিল নিশ্চয়ই স্পেনীয় মালিকের। ঢাকার কূটনীতিকপাড়ার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সকালে বেকারি এবং রাতে রেস্তোরাঁ হিসেবে ‘হলি আর্টিজান’ জনপ্রিয় হয়েছিল সে এলাকায় বসবাসরত বিদেশি আর তরুণদের মধ্যে। বিবিসি, সিএনএন, এবিসি, রয়টার, এপি, আল জাজিরা-– এমনসব নামি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষ্যকারদের কণ্ঠে এ তথ্য প্রচারিত হয়েছে বহুবার।
রমজান মাসে এশার নামাজের আজান হয়ে যাওয়ার পর পর এই শান্তির রেস্তোরাঁয় ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে যে জঙ্গিরা তলোয়ার ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছিল, জিম্মি করেছিল দেশি-বিদেশিদের, প্রথম লগ্নেই গ্রেনেড আক্রমণে হত্যা করেছে দুজন কর্তব্যে নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ অফিসার ও আহত করেছে চল্লিশের অধিক পুলিশ সদস্য ও নিরীহ পথচারীকে, সেনা অভিযানের বহু পূর্বেই রেস্তোরাঁর ভেতরে জবাই করেছে বিশ জনকে– সেই রক্তাক্ত নারকীয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস উৎকণ্ঠার পর।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর চৌকশ প্যারা কম্যান্ডোদের সঙ্গে অন্যান্য বাহিনীর সমন্বিত ১৩ মিনিটের ঝটিকা আক্রমণে ছয়জন জঙ্গি নিহত এবং একজন জীবিত ধৃত হয়েছে বলে জানা গেছে। উদ্ধার করা গেছে তের জনকে। বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষাহীন অসহায় নাগরিকদের উপর জঙ্গি আক্রমণ ও তাদের দমনে সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রতি-আক্রমণ যা আমরা টিভির পর্দায় দেখে এসেছি এতদিন, তারই অনুরূপ দৃশ্যের রিলে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বাংলাদেশে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে বলছি, জঙ্গি আক্রমণ মোকাবেলায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের পারঙ্গমতা পরাক্রমশালী দেশের বাহিনী থেকে কোনো অংশেই কম ছিল না। বেশ কয়েকজনের মূল্যবান জীবন তারা বাঁচাতে পারেননি, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অসহায় জিম্মিদের উদ্ধারে সমর্থ হয়েছেন। দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ তারা পাবেন।
পুলিশের যে দুজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার জীবন বিসর্জন দিলেন, তাঁরাও মানুষের অন্তরের ভালোবাসা পাবেন। বিশ্ববাসীর চোখে উদীয়মান বাংলাদেশ জঙ্গি মোকাবেলায় সক্ষমতার এক উজ্জ্বল নজির স্থাপন করল।
পৃথিবীজুড়ে একের পর এক এমন ভয়াবহ আক্রমণের পর বাংলাদেশেও যে তা হতে পারে সে আশঙ্কা ছিল শুধু গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নয়, সচেতন নাগরিকদেরও। তার কারণও ছিল। যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দণ্ড ও তা কার্যকর হবার প্রেক্ষাপটে, এই দল এবং নানা নামে সক্রিয় এই দলের জঙ্গি গোষ্ঠী যে চুপচাপ বসে থাকবে না তা তারা প্রদর্শন করছিল একের পর এক গুপ্তহত্যা ঘটিয়ে।
এমন গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত যারাই ধরা পড়েছে, তাদের প্রায় সবার জামায়াত বা শিবির-সংশ্লিষ্টতা তা-ই প্রমাণ করে। উন্মুক্ত রাজপথে রাজনীতির নামে সহিংস কর্মকাণ্ড চালাবার সক্ষমতা তারা আগেই হারিয়ে ফেলেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় ও সাহসী নেতৃত্ব এবং তাঁর পেছনে ১৪ দলীয় জোটে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রবল ‘না’ ও জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ভ্রান্ত ও আত্মঘাতী রাজনীতির পরাজয়ের কারণে জামায়াত ও তাদের সহযোগী জঙ্গিরা দৌড়ের উপর ছিল। এদের কোমর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল।
তাই আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের দেশীয় এজেন্ট হয়ে এরা যে গুপ্ত আক্রমণের মরণ-কামড় দেবে তাতে আশ্চর্য কী?
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি উত্তরার দিয়াবাড়ি খালে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা গেল ওই এলাকার মানুষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী। রিভলভার ও পিস্তলের সঙ্গে অ্যাসল্ট রাইফেলের বড় ম্যাগাজিন ও গুলি পাওয়া গেলেও ভারী অস্ত্রগুলো পাওয়া যায়নি। অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, বড় ধরনের নাশকতা ঘটাবার জন্যেই এমন অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছিল জঙ্গিরা। অল্পদিনের ব্যবধানে ঢাকার কূটনীতিপাড়ায় ঘটল তেমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড।
সাধারণ মানুষের সহায়তা পাচ্ছে বলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারছে, যেমনটা আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছিলাম একাত্তরে। কিন্তু প্রশ্ন হল, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়ে। কেন কূটনীতিপাড়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘হলি আর্টিজান’ রেস্তোরাঁর মতো স্থাপনা, যেখানে বিদেশিরা নিয়মিত যান, তার উপর বিশেষ নজরদারি ছিল না?
কাকতালীয়ভাবে হলেও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদের গুলশান থানার এই রেস্তোরাঁয় উপস্থিত থাকায় ও তাঁর সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে তড়িৎ পাল্টা-আক্রমণে যেতে পেরেছিল পুলিশ বাহিনী। জঙ্গিদের গ্রেনেড আক্রমণে তিনি ও মহানগর ডিবির সহকারি কমিশনার রবিউল ইসলামের আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে পুলিশের যে প্রতিরোধ-ব্যূহ গড়ে তোলা গেল, তার ফলেই বিদেশিদের জবাই করার পর ঘাতকরা পালিয়ে যেতে পারেনি।
জামায়াত-জঙ্গিদের সাংগঠনিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে পারলেও নাগরিকদের সুরক্ষায় যে তা যথেষ্ট নয়, তা তো খুবই স্পষ্ট। ব

No comments:

Post a Comment