একটি সেতু বদলে দেবে দেশ
পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু আসলেই দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে।
তবে নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি সেতু নির্মাণ করতে যাওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। বহু বছর আমাদের যোগাযোগ ছিল নদীনির্ভর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সড়ক যোগাযোগ গুরুত্ব পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বাধা ছিল নদ-নদী। যেকোনো সড়ক তৈরি করতে গেলেই ছোট-বড় নদী অতিক্রম করতে হতো। অনেক ফেরি চালু ছিল। আমি যমুনা সেতু নির্মাণকাজে বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত ছিলাম ১৯৮৫ সাল থেকে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ কখনো ভাবতেই পারেনি সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছে যাবে। আবার কাজ শেষ করে সেদিনই ফিরে আসা সম্ভব হবে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সে সময়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য পদ্মায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৯৯৮ থেকে ২০০০ এই সময়ে পূর্ব সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাবত্য যাচাই হয়। ২০০৪ সালে জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়। নতুন নকশায় নিচে চলবে রেল এবং ওপরে মোটরগাড়ি।
কেন দোতলা সেতু হবে? এর সুবিধাই বা কী? আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবেছি। এ পথটি ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কনটেইনার নিয়ে ছুটে চলবে ট্রেন। পদ্মায় নৌযান চলে অনেক এবং সেটাও বিবেচনায় রাখতে হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আমাদের সহায়তার অঙ্গীকার করে। বিশ্বব্যাংক বলে, তারা এখানে মূল দাতা হবে। জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকও ছিল। মূল সেতুর নির্মাণকাজের তদারকি কে করবে এ জন্য প্রস্তাব চাওয়া হয়। চীনা একটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা অযোগ্য মনে করি। তারা অন্য একটি সেতুর কাজ তাদের বলে চালিয়েছিল। এরপরেই পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই ঘুষের অভিযোগ ওঠে। কয়েকজন জেলে গেলেন। একজন মন্ত্রী পদ হারালেন। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে বলতে পারি কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের অঙ্গীকার থেকে সরে যায়। এ ধরনের কাজের শর্ত অনুযায়ী মূল ঋণদাতা চলে গেলে অন্যরাও চলে যায়। কাজেই একে একে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়।
এরপর বেশ কিছুদিন সিদ্ধান্তহীনতা চলতে থাকে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির মাধ্যমে এই সেতুটি করার কথা ওঠে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা হয়। আমার ব্যক্তিগত ধারণা ছিল, মালয়েশিয়ার এত বড় কাজের অভিজ্ঞতা নেই। একসময় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার কথা ওঠে। প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান, নিজেদের টাকায় সেতু বানালে তদারক করতে পারবেন? আমি তাঁকে বলি, সেতুর পাঁচটি কাজের মধ্যে নদীশাসন ও মূল সেতুর কাজ আমরা পারব না। দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের কাজ, সার্ভিস এরিয়া-২-এর কাজ এগুলো আমরা করতেই পারি। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা যেতে পারে। এরপরেই এই কাজগুলো শুরু হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে সেতু ও নদীশাসনের কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজ তদারক করার আন্তর্জাতিক ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করে এসেছেন। আমরা গত সপ্তাহেও গিয়েছি। খুব দ্রুতগতিতেই কাজ চলছে। ২০১৮ সালেই এই সেতুতে রেল ও যান চলবে।
তবে এ ধরনের বড় সেতু করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ পদ্মা-যমুনার সম্মিলিত প্রবাহ। প্রতি সেকেন্ডে মাওয়া পয়েন্টে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়। আমাজন নদীর পরেই কোনো নদী দিয়ে এত বেশি পানি প্রবাহিত হয়। এখন নদীর যে তলদেশ, আগামী এক শ বছর পর সেটা কেমন থাকবে, ভূমিকম্প প্রতিরোধে কী করা হবে—এগুলো বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী এক শ বছরে নদীর তলদেশের ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে। আরও ৫৮ মিটারসহ মোট ১২০ মিটার গভীরে গিয়ে পাইলিং করতে হচ্ছে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর পদ্মা সেতু একটু বাঁকানো। কাজেই কাজটি অরেকটু কঠিন। এ ছাড়া আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ নদীশাসন। এ কাজেই ব্লকের পাশাপাশি জিয়ো টেক্সটাইলের বস্তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেতু হলে কতটা লাভবান হব আমরা? এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রথম কোনো সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিতে উন্নত। এই সেতু হয়ে গেলে তাদে
FB LIke Bottom
Friday, January 1, 2016
একটি সেতু বদলে দেবে দেশ পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment